ডাক্তার অর্ধেন্দু দে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার হাত থেকে হজাই কে বাঁচাবার চেষ্টা করেছিলেন : বিজয় chskrabortyb

‎ সেদিন যদি অর্ধেন্দু মন্ত্রী পদে না থাকতেন তাহলে কি হতো??!!
‎ দিনটি ছিলো ৮ ই ডিসেম্বর, ১৯৯২ ইং।
‎  তার দুদিন পূর্ব অর্থাৎ৬ ই ডিসেম্বর ভারতের ইতিহাসের একটি কালো দিন। সেদিন  উত্তর প্রদেশের সরজু নদীর তীরে অবস্থিত ফয়জাবাদে (অযোধ্যায়) মোগল স্থাপত্যের এক ঐতিহাসিক নিদর্শন*"বাবরি মসজিদ" ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো *"রাম জনম ভূমি" উদ্ধারের নামে। কর সেবার নাম করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, আরএসএস ও বিভিন্ন হিন্দুত্ব বাদী সংগঠনের মিলিত প্রয়াসে, হাজার হাজার কর সেবক উল্লিখিত মসজিদটি ধূলোয় মিশিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়েছিল। সরেজমিন পর্যবেক্ষণে ছিলেন বিজেপি দলের ভীষ্ম পিতামহ, সম্মানীয় লালকৃষ্ণ আদবানী, মরুলি মনোহর যোশী, শ্রীমতি উমা ভারতী প্রমুখ্যে বিজেপির প্রথম সারির অনেক নেতা। তখন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বিজেপি নেতা মাননীয় কল্যান সিং, ভারতের প্রধান মন্ত্রী ছিলেন প্রয়াত কংগ্রেস নেতা সম্মানীয় নরসীমা রাও। আসামের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন প্রয়াত কংগ্রেস নেতা হিতেশ্বর শইকিয়া। হোজাইর বিধায়ক প্রয়াত ডাঃ অর্ধেন্দু কুমার দে ছিলেন হিতেশ্বর শইকিয়া মন্ত্রী সভায় মন্ত্রী। বাবরি মসজিদ নিয়ে পরে লিখব।
‎ আজকের আলোচ্য সেদিন যদি অর্ধেন্দু মন্ত্রী না থাকতেন তাহলে কি হতো? 
‎   বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরিপেক্ষিতে সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংগঠিত হযেছিল। বাবরি ধ্বংসের প্রতিশোধ স্পৃহায় বিভিন্ন জায়গায় মন্দির ভাঙ্গা হযেছিল,রক্ত গঙ্গা বয়েছিল,  অনেক নিরীহকে হিন্দুকে  প্রাণ দিতে হযেছিল । কোনও কোনও জায়গায় মুসলিম ধর্মের অনেকেও প্রাণ হারিয়েছেন। বাদ যায়নি বর্তমানের হোজাই জিলা- তৎকালীন হোজাই মহকুমাও। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরপরই সমগ্র হোজাই ভয়, ভীতি, আতঙ্কের কালো ধুঁয়ায় ছেয়ে যায় কিন্তু জন নিরাপত্তায় প্রশাসন বিশেষ কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করে নি।
‎   এটা ঠিক বাবরি ধ্বংসে RSS  ঘরনার কিছু লোক আনন্দিত হয়েছিলেন।অন্যদিকে মুসলীম সম্প্রদায়ের কিছু লোক প্রতিশোধ নেয়ার জন্য কোনো কোনও স্থানে গোপন আলোচনায় বসে রুটমেপ তৈরি করেছিল। ৭ ই ডিসেম্বর ডবকা শহরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের উপস্থিতিতে একটি শান্তি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার আয়োজক ছিলেন ডবকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক পরবর্তি সময়ে বিধায়ক  খলিলুর রহমান  চৌধুরী। সভায় যথেষ্ট জনসমাগম না হয়ায় পরের দিন অর্থাৎ ৮ই ডিসেম্বরে সকাল ১০ টায় বড় আকারের জনসমাগম করে শান্তি কমিটি গঠন করার সিধান্ত গ্রহণ করে সভা সমাপন হয়। পরের দিনের সভার প্রস্তাবক ছিলেন CPI(M) নেতা আমবাড়ির আব্দুল হক। মাইকিং করে সভার প্রচার করা হয়।
‎ পরের দিন প্রচুর লোকের সমাগম হয়। সভা হিন্দু মুসলমানে ভরপুর ছিল। আশপাশের হিন্দুগ্রাম যেমন গাছ তলা, কুরকুট বস্তি, নাহার গাঁও আদি গ্রামের প্রতিটি বাড়ি থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদের কমেও একজন এই সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন।
‎ ডিসেম্বর মাস। প্রাপ্ত বয়স্ক দের অধিকাংশই ধান কাটার কাজে ব্যাস্ত। বাড়িতে শুধু মহিলা, শিশু, কিশোর, কিশোরি ও শারিরীক ভাবে অক্ষম পুরুষ মানুষরাই ছিলেন। বাকিরা শান্তির খোঁজে ডবকায়।
‎ দুপরের নামাজের ঠিক আগ মুহূর্তে ডবকা শহর থেকে নাতিদূরে কুর্কুট বস্তিতে সর্বগ্রাসী আগুনের লেলিহান শিখা দেখা যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই গাছতলা থেকে কিছু লোক দৌঁড়ে এসে শান্তি সভায় খবর দেয় যে কুর্কুট বস্তির হিন্দুদের বাড়িতে মুসলিম দুষ্কৃতি কারীরা আগুন ধরিয়ে দিয়ে মানুষজন কে মারধর করছে। সবার হাতেই লাঠি, ঝাটি, দা, বল্লম । হিন্দুরা প্রাণ বাঁচাতে ধান ক্ষেতে লুকোচ্ছে, তবু রেহাই পাচ্ছে না। পুলিশ, মিলিটারি চাই। মিটিং বন্ধ করে সবাই চলুন হিন্দু দের বাঁচাতে হবে। শুনা মাত্র মিটিং ছেড়ে বিশেষ করে হিন্দুরা নিজ নিজ গ্রামের দিকে বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার করে দৌড়তে শুরু করেন। সভায় উপস্থিত মুসলিমরাও কিম কর্ত্তব্য বিমূঢ় হয়ে সভা ছেড়ে চলে যান। ঠিক তখনি ডবকা শহর সংলগ্ন হোজাই সমষ্টির প্রান্তিক গ্রাম নাহার গাঁও এ দুষ্কৃতিকারীরা বেছে বেছে হিন্দুদের বাড়ীতে আগুন ধরিয়ে নর হত্যায় মেতে উঠে। প্রাণ বাঁচাতে গ্রামের প্রভাবশালী ভানু ডাক্তারের বাড়ীতে মহিলা, শিশু, কিশোর, কিশোরি আশ্রয় নেয় কিন্তু দুষ্কৃতিকারীরা সে বাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেয়। গৃহ পালিত চতুষ্পদী পশুও আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে যায়। এযেন নেলির দ্বীতিয় সংস্করণ।এত কিছু ঘটে চলেছে কিন্তু প্রশাসন যেন অমাবশ্যার চাঁদ। 
‎    আমি তখন সিপিআই(এম) দলের কর্মী ছিলাম। সেদিন শিলিগুড়ি বস্তির কমরেড সুশীল দাসের বাড়ীতে বিকেলে কৃষক সভার একটি বৈঠক ছিল। আমি সেখানে ছিলাম। বৈঠকে ইসলাম নগরের প্রয়াত কমরেড আফতাব আলী, হোজাইর কমরেড অশোক পাল চৌধূরীও উপস্থিতি ছিলেন। বিকেল তিনটায় আমার বাড়ী থেকে দুইটি কিশোর চাইকেলে চেপে হাঁপাতে হাঁপাতে কমরেড সুশীলের বাড়ীতে গিয়ে আমাকে বলে,"কাকা শীঘ্র বাড়ীতে চলো। মুসলমানরা পূব যোগীজানে হিন্দুদের বাড়ীতে আগুন  ধরিয়ে দিয়ে তাঁদের কে মারছে। অনেক ক্ষত, বিক্ষত লোক কাঁদতে কাঁদতে হাসপাতালে আসছে। তুমি তাড়াতাড়ি চলো।"
‎    কমরেড সুশীলের বাড়ী থেকে রাস্তায় উঠে আকাশের দিকে চেয়ে দেখি ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ন্ত ছাই। আমার বাড়ী থেকে সুশীলের বাড়ীর দুরত্ব প্রায় চার কিলোমিটার। সাইকেলে চেপে বাড়ীতে পৌঁছে দেখি ক্ষত বিক্ষত রক্তাক্ত নরদেহের মিছিল ক্রমশ  যোগীজান হাসপাতালে আসছে। যোগীজান বাজারে শত শত উত্তেজিত মানুষের ভিড়। যোগীজান বাজার মসজিদের ভিতরে সন্ধ্যার নামাজ আদায় করতে কিছু সংখ্যক ইসলাম ধর্মাবলম্বী লোক প্রবেশ করেছেন। যাঁদের মুখ এখনো স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছে তাঁরা হলেন আমলি পুখুর গ্রামের রহমত আলী, হাজী আফতাব আলী, মজ্জমিল আলী মাঝর ভূঁইয়া, সফিকুর রহমান। সকলেই আজ প্রয়াত। অনেক উত্তেজিত যুবক চাইছিল মসজিদে আগুন ধরিয়ে দিতে কিন্তু ঢাল হোয়ে মসজিদ রক্ষায় দাঁড়িয়েছিলাম আমি, কৃষ্ণ সিং, ক্ষিরোদ সমাদ্দার। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, আমরা যখন মসজিদ রক্ষায় ব্যস্ত ঠিক তখনি মসজিদ থেকে ৫০০ মিটার উত্তরের খরের চালা ঘরের একটি কালী মন্দিরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ইতি মধ্যে নমাজ শেষ হয়ে গেছে, নামাজীরা বের হয়ে এসেছেন। আমরা কয়েকজন আগুনের গ্রাসে থাকা মন্দিরের দিকে ছুটে যাই। আমার সঙ্গে ছিলেন উল্লেখিত নামাযীগণ, ও রাজবাড়ি গ্রামের দ্বিজমনি সিং। ধূমকেতুর মতো ডাঃ অর্ধেন্দু কুমার দের জীপে চড়ে এসে উপস্থিতি হয়েছিলেন ধনীরাম থাওসেন। প্রতিহিংসার আগুনে গিলে খাওয়া মন্দিরের নিকটে গিয়ে দেখি নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আসাম ফুট বলের এক সময়ের জাতীয় নায়ক, সেই গ্রামের নির্মল নাহা। তিনি আঙুলের নিশানায় তাঁর পাশের বর্ধন বাড়ির উঠান দেখালেন। উঠানে গিয়ে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে গৃহ কর্তা হীরালাল বর্ধন ও তাঁর স্ত্রীর রক্তাক্ত অচেতন দুটি দেহ। তখনও জ্বলছিল মন্দিরের সম্মুখে থাকা উকিল কালীচরণ চৌধুরীর রান্না ঘর। মন্দিরের খানিকটা উত্তরে দুষ্কৃতিকারীরা হাতে হাতে দা, বল্লম, লাঠি, ঝাটি নিয়ে উল্লাস করছে,আমাদের দিকে তেড়ে আসতে চাইছে, বাঁধা দিচ্ছেন আমার সাথে যাওয়া পূর্বে'ল্লেখিত নামাজীগণ। এহেন পরিস্থিতিতে দ্বিজমনি সিং আমাকে ছেড়ে চলে যান, ধূমকেতুর মতো জীপে চড়ে আসা ধনীরাম থাউসেনও পালিয়ে যান। তখন শীতের সন্ধ্যার চাদরে মুড়ে গেছে অঞ্চল। ঠিক তখনি হোজাই থেকে অগ্নী নির্বাপক বাহিনীর একটি গাড়ী আগুন নেভাতে এসে মন্দির প্রাঙ্গণ পৌঁছায়। গাড়ীর ড্রাইভার ছিলেন যোগীজানের প্রয়াত সন্তোষ রায় ও head fire man ছিলেন যোগীজানের শম্ভু ধর। তাঁদেরকে দেখে আমি বাঁচার রসদ পেলাম। আমার অনুরোধে ও বাস্তবতা উপলব্ধি করে তাঁরা পাঁচ মিনিটের মধ্যেই গাড়ীতে থাকা সমস্ত জল জ্বলন্ত মন্দির ও কালীপদ চৌধুরীর রান্না ঘরে ঢেলে আমাকে নিয়ে হোজাই থানায় পৌঁছায়। থানায় তখন সবে ধন্ নীলমণি এক মাত্র OC উপস্থিত ছিলেন। যতখানি মনে পড়ে তাঁর নামছিল মৃণাল ভট্টাচার্য, মিনি ভট বলে পরিচিত ছিল। থানায়  আমি মন্ত্রী ডাঃ দের ছায়া সঙ্গী শ্রদ্ধেয় শিক্ষক প্রমোদ রঞ্জন দাস ও তৎকালীন হোজাই যুব কংগ্রেসের নেতা ভাতৃপ্রতিম রাখল দাসকে পাই। তাঁরা তদ্বির করছেন কিছু করার জন্য কিন্তু ঢাল নেই তরোয়াল নেই নিধিরাম সর্দার সম OC মিনি ভট নির্লিপ্ত হয়ে বই পড়ছিলেন।OC র নির্লিপ্ততায় আমি ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁর সাথে তীব্র বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়লে প্রমোদ রঞ্জন দাস ও রাখল দাস আমাকে শান্ত করেন।  ডিসেম্বরের প্রচণ্ড শীতে ভয়ে আতঙ্কে ভীত হোজাই কে মনে হচ্ছিল জন হীন, প্রাণ হীন ইটের পাঁজরের লোহার খাঁচার একটি পরিত্যাক্ত শহর। সন্ধ্যা রাতের দিকে হাঁটছে। আমি পিপাসা মিটিয়ে ক্লাতি দূর করতে থানার সম্মুখে থাকা বিদ্যুৎ বিভাগের কার্যালয় চত্বরে থাকা আমার পরিচিত এক সিপিআই(এম) কর্মী শর্মা দার ঘরে গিয়ে জল পান করে চায়ের কাপে চুমুক দেয়া মাত্র শর্মা দার ছেলে বললো, পুলিশ, মিলিটারির বিরাট একটি কনভয় থানায় ঢুকছে। শুনা মাত্র চা'র কাপ রেখে দৌঁড়ে থানায় ঢুকি। ইতি মধ্যে প্রমোদ রঞ্জন দাস ও রাখাল দাস থানা ছেড়ে চলে গেছেন। এই কনভয়ে ছিলেন DC ,SP ও একজন সমীরিক বাহিনীর GOC । তাঁরা এসেই OC র রুম বন্ধ করে আলোচনায় বসে গেছেন। আমার তর সইছিল না। পুলিশ OC র রুমের সামনেই যেতে দিচ্ছিল না। পুলিশের বাধা টপকে oc র দরজার সম্মুখে গিয়ে দরজায় জুরে জুরে ধাক্কা মারায় দরজা খুলে এক জন মিলিটারি অফিসার বের হয়ে হিন্দীতে বলেন ,"কেন এভাবে চিৎকার করছ?" আমিও হিন্দীতে বললাম ," মানুষ খুন হচ্ছে, গ্রামের পর গ্রাম আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে আর তোমরা সম্রাট নীরুর মত এখানে বসে পিয়ানো বাজাচ্ছ।"আমার কথায় সেই মিলিটারি অফিসার বললেন, "আপলোক মিটিং কি জিয়ে মে উনকা সাথ চলতে  হ্যায়।" এই বলেই থানার বারান্দা থেকে নেমে তার অন্যান্য অফিসারগণকে আদেশ দিয়ে বললেন, "গাড়ী ঘুমাও, উনকা সাথ চলো।"বলেই তাঁর জীপে আমাকে উঠিয়ে বললেন "রোড দেখাও।" রেল গেইট পর হোয়া মাত্র গোপাল নগরের দিকে আগুনের লেলিহান শিখা সেই অফিসার দেখতে পেয়ে বললেন "ওধার কেয়া।" আমি বললাম, "না।"সেই অফিসার ও এক গাড়ী মিলিটারি জোয়ানকে নিয়ে পৌঁছে গেলাম পূর্বে উল্লিখিত কালী মন্দিরের সম্মুখে। বর্তমানে কালী মন্দিরের নাম শক্তি পীঠ। তখন এক দিকে আল্লা হু আকবর, নারায়ে তকবীর ধ্বনি অন্যদিকে বন্দেমাতরম ধ্বনি চলছে। আমরা এসে দেখলাম আগুন তখনও জ্বলছে। নির্মল নাহা ও উকিল কালী চরণ এর স্ত্রী পুত্র কন্যা গণ কিছু একটা খোঁজে চলেছেন। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম, হীরালাল বর্ধনের পুত্র দ্বয় ভুলা এবং দুলুকে পাওয়া যাচ্ছে না। খোঁজা খুঁজি করে দুই ভাইয়ের রক্তাক্ত নিথর দেহ ধান ক্ষেতের মধ্যে পাওয়া গেল। মিলিটারি অফিসার তাঁদের গাড়ী করে যোগীজান হাসপাতালে পৌঁছে দিল। সেই অফিসার রেডিও বার্তায় কারো সাথে কোথা বলতে বলতে হাসপাতালে আসলেন। সেখানে ছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট স্বপন কুমার দাস। তিনি তাঁর জীপে করে পূব যোগীজান পশ্চিমযোগী জান থেকে ক্ষত বিক্ষত মানুষজনকে হাসপাতালে আনছিলেন। যোগীজান হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী ও চিকিৎসক না থাকায় অধিকাংশ কেই ন গাঁও সিভিল হাসপতালে ও গৌহাটি মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছিল। এম্বুলেন্স না থাকায় ম্যাজিস্ট্রেট স্বপন দাস একটি বজার বাস যোগাড় করে সকলকে একটি বাসে তুলে পাঠিয়েছিলেন।JIGIJSN হাসপতালে সেই দিন উপস্থিত ছিলেন ডাঃ সুভাষ দাস, কম্পাউডার নিবারণ দাস ও তিন জিন নার্চ।   তখন আরো এক গাড়ী মিলিটারি যোগীজান আসায় সেই আফিসার ও তাঁর সাথে আসা জোয়ানরা চলে যায়। সেই অফিসারের ইউনিফর্মের পকেটের উপর লেখা ছিল কেদিয়াপ্পা।
‎ তখনো আল্লা হু আকবর, নারায়ে তকবীর ধ্বনির     সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে বন্দেমাতরম ধ্বনিও।
‎ ততক্ষণে হয়ত পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে গোপাল নগরের মিলন দেবনাথের হিন্দু পাড়া। মিলন দেবনাথ গোপাল নগরের APM ছিলেন। তাঁর বাড়ীতে ৭ ই ডিসেম্বর বিকেলে সিপিআই(এম) র গোপাল নগর শাখার বৈঠকে আমি পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলাম।
‎ অনেকের মনেই হয়ত প্রশ্ন জাগছে, মূল বিষয় ছেড়ে এত লম্বা "রামায়নের মধ্যে ভূতের কেঁচ কেঁচি" কেন ?  কারন,সেদিনের পরিস্থিতি কি ছিলো সেইটি নব প্রজন্মের কাছে উন্মোচন করতেই  নাতিদীর্ঘ কিন্তু সত্যি কাহিনীর এই সংক্ষেপ ভূমিকা।
‎ এখন আসছি, ডাঃ অর্ধেন্দু কুমার দে সেদিন মন্ত্রী পদে না থাকলে কি হতো - প্রশ্নে। 
‎রাত আনুমানিক নয় টা। মন্ত্রী ডাঃ অর্ধেন্দু কুমার দের কনভয় দিশপুর থেকে হোজাই শহরের প্রবেশ মুখ ডিমুরু নদীর কাঠের ব্রীজের উপর উঠে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো। ডাঃ দে ও তাঁর সঙ্গে থাকা সকল নিরাপত্তা কর্মীও গাড়ী থেকে নামলো। তাঁরা দেখলেন আল্লা হু আকবর ধ্বনি দিতে দিতে হাতে হাতে মুশাল নিয়ে এক বিরাট বাহিনী গোপাল নগরের দিক থেকে হোজাই শহরের দিকে এগুচ্ছে। ডাঃ দে আকস্মিক ভবে তৎক্ষণাৎ তাঁর সঙ্গে থাকা এসকর্ট গাড়ীর ও পাইলট গাড়ীর ও তাঁর নিজের গাড়ীর ড্রাইভার দেরকে সাইরেন বাজাতে বলেন। তারাও তাই করলো। বন্দুক ধারী দেরকে বললেন তোমরা শুন্যে কয়েক রাউন্ড গুলি করো। নাহলে আমিও বাঁচব না, তোমরাও বাঁচবে না। ধ্বংস হয়ে যাবে হোজাই শহর। তার কথা মতো সকলেই তাই করলো। দুষ্কৃতী কারীদের সেই বিশাল বাহিনী হয়ত ভাবলো মিলিটারী এসে গেছে, তাই তাঁরা ছত্র ভঙ্গ দিয়ে পালিয়ে গেলো। বেঁচে গেলো হোজাই শহর। বেঁচে গেলো RSS এর উত্তর পূর্বাঞ্চলের হেড কোয়াটার আদর্শ বাজারের গীতাশ্রাম ও। ডাঃ দে পৌঁছাবার পূর্বেই আদর্শ বাজারের গীতাশ্রমের সন্নিকটে থাকা কয়েকটি দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল। আগুনের খেলা সেখানেই শেষ হলো।
‎ মন্ত্রী ডাঃ অর্ধেন্দু কুমার দে বাড়ীতে না গিয়ে সুজা চলে যান হোজাই থানায়। সেখানে বসেই পুলিশ এবং প্রশাসনকে দাঙ্গা মোকাবিলার পরামর্শ দিয়ে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী হিতেশ্বর শইকিয়াকে রেডিও বার্তায় সমস্ত ঘটনা জানিয়ে তাঁর কনভয় নিয়ে সাইরেন বাজিয়ে হোজাই শহরে চক্কর মারতে থাকেন। এতে মনোবল বৃদ্ধি হয় হোজাই শহর বাসীর। তাঁরা ভাবলেন সামরিক বাহিনী টহল দিচ্ছে। অন্যদিক সামরিক বাহিনী ভেবে দুষ্কৃতি কারীরা ভয়ে কুঁচকে হোজাই শহরে লুটপাট করা থেকে বিরত থাকে। 
‎ সেদিন ডাঃ অর্ধেন্দু কুমার দের আকস্মিক বুদ্ধিমত্তার জন্য শুধু নগেন্দ্র নগরের মাত্র দুজনকেই হোজাই বাসী হারিয়েছিল। না হলে সংখ্য অনেক বেশী হত।ডাঃ অর্ধেন্দু কুমার দের সাহস ও তাৎক্ষণিক বুদ্ধীর জন্য ভয়াবহ নির্মমতার সাক্ষী হতে হলো না হোজাই শহরকে, নির্ঘাত বিপদ থেকে রক্ষা পায় হোজাই  শহর বাসী। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলছি হিন্দুত্বের ধ্বজাধারী RSS এর কোনও নেতা বা কর্মীকে হোজাই র হিন্দুদের দুঃসময়ে সেদিন দেখা যায়নি। হোজাই বাঁচলো ডাঃ অর্ধেন্দু কুমার দে মন্ত্রী পদে থাকায়।
‎ তাই এই শির নাম ডাঃ অর্ধেন্দু কুমার দে সে দিন মন্ত্রী পদে না থাকলে কি হত!?
‎   ৮/১২/৯২ সনের পরে যাঁদের জন্ম বা ঐ দিন পর্যন্ত যাঁরা মায়ের কোলে বা হাটি হাটি পা পা করছিলেন  তাঁদেরকে সত্য  ঘটনার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে আমার এই প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।
‎ ক্রমশ, পরবর্তী পোস্টে।
‎ ইতি 
‎বিজয় চক্রবর্তী।
বি দ্রঃ;- ৮ই ডিসেম্বরের সেই নর হত্যায় ডবকা, হোজাই ও যোগী জানের ৫৬ জন নিরীহ হিন্দু আবাল বৃদ্ধ বনিতা দুষ্কৃতীর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁদের স্মৃতিতে যোগী জানে শক্তি পীঠ কালী মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে একটি স্মৃতি সৌদ নির্মাণের কাজ চলছে।

Comments

Popular posts from this blog

মহালয়ার পবিত্র তিথিতে প্রকাশ পাবে বাংলা শারদ সংখ্যা নয়া ঠাহর

শুভ মহালয়া তিথিতে ১৮ তম "নয়া ঠাহর পুজো সংখ্যা প্রকাশ

প্রণব আচার্য্য লিখিত বৈষ্ণব গ্রন্থ প্রকাশ